বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা বলতে কী বোঝ? বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কীভাবে রক্ষিত হতে পারে তা আলোচনা করো।

বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা : পার্লামেন্ট প্রণীত কোনো আইন বা শাসনবিভাগীয় নির্দেশকে বিচার বিশ্লেষণ করে সংবিধান- বিরোধী মনে হলে, তাকে অবৈধ বা বাতিল ঘোষণা করার যে ক্ষমতা বিচারবিভাগ ভোগ করে তাকে বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা বা পর্যালোচনা বলে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : নির্ভীক ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা ছাড়া সভ্য গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অসম্ভব। নাগরিক ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করার জন্যও নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী বিচার বিভাগ দরকার। আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কতকগুলি নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা –

বিচারপতিদের যোগ্যতা
যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করেই বিচারপতিদের নিয়োগ করা হলে প্রত্যাশা করা হয় যে, উন্নত গুণমান সম্পন্ন ব্যক্তিরাই নির্ভীকভাবে নিজেদের বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী মামলার পর্যালোচনা ও রায় দিতে পারবেন। উপযুক্ত যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন চাপের মুখে নতিস্বীকার করেন ও প্রভাবিত হন এই কারণেই বিচারপতিদের যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ করা উচিত।
বিচারপতিদের নিয়োগ পদ্ধতি
বিচারপতিদের নিয়োগের পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত যেন বিচারকরা রাজনীতিবিদ, – আইনসভা ও শাসনবিভাগ নিজের মর্জিমাফিক অনুগ্রহবণ্টনকারী ব্যক্তিদের স্বার্থে রায় দিতে বাধ্য না হন। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ পদ্ধতি আছে।
বিচারকগণের কার্যকাল
বিচারপতিদের কার্যকালের স্থায়িত্বের উপরও বিচারবিভাগের স্বাধীনতা বিশেষভাবে নির্ভরশীল। কার্যকালের স্থায়ীত্ব না থাকলে নিষ্ঠার সঙ্গে বিচারকার্য সম্পাদন করা বিচারকদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কার্যকাল স্বল্পস্থায়ী হলে বিচারপতিদের পদের অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকে। আবার বিচারপতিদের কার্যকাল স্থায়ী হলে তাঁরা নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে ন্যায় বিচার করতে পারে। তাই বর্তমানে বিচারপতিদের কার্যকালের মেয়াদ স্থির করে দেওয়া হয়।
বিচারকগণের অপসারণ
অকারণে বা সামান্য কারণে অপসারণের ভয় বা আশঙ্কা থাকলে বিচারকদের পক্ষে ন্যায় বিচার করা সম্ভব হয় না। সেই জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করেই বিচারপতিদের অপসারণ করা দরকার। এই দিক থেকে বিচার করেই কেবলমাত্র অক্ষমতা, দুর্নীতিপরায়ণতা, অযোগ্যতা, সংবিধান ভঙ্গ কিংবা অন্য কোনো গুরুতর অপরাধের বিশেষ পদ্ধতি অণুসরণ করেই বিচারকদের অপসারণ করা দরকার।
বিচারপতিদের বেতন ও ভাতাসহ আর্থিক সুবিধা
বিচারপতিদের বেতন, ভাতা, অবসরকালীন আর্থিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা এমন হওয়া উচিত যেন তারা দৈনন্দিন অভাব অভিযোগ ও আর্থিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্ত হয়ে বিচারকার্য সম্পাদন করেন।
বিচারবিভাগের নিরপেক্ষতা সম্বন্ধে যাই বলা হোক না কেন, এ বিষয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাঠামো ও চরিত্রের উপর নির্ভর করে বলে মনে করা হয়। অধ্যাপক ল্যাকি এবং অন্যান্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, বিচার ব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের আদর্শ নিরপেক্ষ হতে পারে।


