জীববিদ্যা ( 12th Class )
ভাইরাসঘটিত রোগের বিস্তার ( Transmission of Viral Diseases ) সম্বন্ধে আলোচনা কর ?

ভাইরাসঘটিত রোগের বিস্তার : ভাইরাসঘটিত উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের রোগ কীভাবে বিস্তার লাভ করে তা নীচে উল্লেখ করা হল
ভাইরাসঘটিত রোগের বিস্তার উদ্ভিদের ক্ষেত্রে (In plants) –

- মৃত্তিকার মাধ্যমে (Through soil) : আক্রান্ত উদ্ভিদদেহ থেকে ভাইরাস মাটিতে প্রবেশ করে দীর্ঘদিন জীবিত থাকে। এরা উদ্ভিদ মূলের ক্ষতের মাধ্যমে পুনরায় সুস্থ উদ্ভিদদেহে প্রবেশ করে। অনেক ক্ষেত্রে মাটির নীচে ছত্রাক বা নিমাটোডের (Nematodes) দ্বারাও ভাইরাস পরিবাহিত হয়।
- স্পর্শ দ্বারা (By contact) : ক্ষেতে কাজ করার সময় আক্রান্ত উদ্ভিদদেহ নিঃসৃত রস সহজেই সুস্থ উদ্ভিদ দেহের সংস্পর্শে আসে এবং সংক্রমিত হয়। স্পর্শ দ্বারা বিস্তারের একটি আদর্শ উদাহরণ হল TMV।
- মূলের মাধ্যমে (Through root) : কৃষি কাজের সময় যন্ত্রপাতি দ্বারা সৃষ্ট মূলের স্বল্প ক্ষতের মাধ্যমে ভাইরাস সহজেই উদ্ভিদদেহে প্রবেশ করতে পারে।
- অঙ্গজ জননাঙ্গের মাধ্যমে (Through vegetative reproductive organ) : স্ফীত কন্দ, কন্দ, কান্ডের কাটা অংশ প্রভৃতি অনেক ক্ষেত্রেই বীজ হিসেবে লাগানো হয়। এইসব অঙ্গ ভাইরাস আক্রান্ত হলে সরাসরি নতুন উৎপন্ন উদ্ভিদে সংক্রামিত হয়।
- কলম তৈরির মাধ্যমে (Through cuttings) : কলম, জোড় কলম তৈরির মাধ্যমে উদ্ভিদের বংশবিস্তার করা হলে সহজেই আক্রান্ত উদ্ভিদদেহ থেকে ভাইরাস নতুন উদ্ভিদদেহে সংক্রামিত হয়।
- বীজের মাধ্যমে (Through seed) : বিন্ মোজাইক, লেটুস-মোজাইক প্রভৃতি কয়েকটি রোগের ভাইরাস বীজের মাধ্যমে নতুন গাছে সংক্রামিত হয়।
- আগাছা ও পরজীবী মাধ্যমে (Through weeds and parasites) : কিছু সংখ্যক আগাছা বিশেষ ভাইরাসের বিকল্প পোষক হিসেবে কাজ করে এবং পরবর্তী ঋতুতে নতুন ফসলে সংক্রামিত হতে সাহায্য করে। আবার স্বর্ণলতার মতো পরজীবী উদ্ভিদের চোষক মূলের মাধ্যমে বিশেষ কিছু ভাইরাস সংক্রামিত হয়।
- পতঙ্গের মাধ্যমে (Through insects) : অধিকাংশ উদ্ভিদ ভাইরাসের বাহক হল পতঙ্গ। পঙ্গপাল, ঘাস ফড়িং, ক্ষুদ্র কীট প্রভৃতি তাদের মুখ- উপাঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত উদ্ভিদদেহ থেকে রস পান করে এবং সুস্থ দেহে সংক্রমিত করে।
ভাইরাসঘটিত রোগের বিস্তার প্রাণী ও মানুষের ক্ষেত্রে ( In animals and human beings )
- স্পর্শ দ্বারা (Through contact) : গুটি বসন্ত, জল বসন্ত, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, মাম্পস প্রভৃতি রোগের ভাইরাস হাঁচি, কাশি ও বাতাসের দ্বারা সহজেই আক্রান্ত দেহ থেকে সুস্থ দেহে সংক্রামিত হয়।
- গৃহপালিত পশুর মাধ্যমে (By cattles) : কুকুর, বিড়াল প্রভৃতি প্রাণীর কামড়ের ফলে রেবিস ভাইরাস মানবদেহে সংক্রামিত হয়।
- বাহক মাধ্যমে (Through vectors) : বাড়ির মাছি, বালু মাছি, মশা প্রভৃতি এনকেফালাইটিস, ডেঙ্গু, পীত জ্বরের জীবাণুর বিস্তার ঘটায়।
- দুষিত জল ও খাদ্যের মাধ্যমে (Through polluted water and food) : হেপাটাইটিস, পোলিয়ো প্রভৃতি রোগের জীবাণু দূষিত জল ও খাদ্যের মাধ্যমে সুস্থ দেহে সংক্রামিত হয়।
- রক্ত সঞ্চারণ ও দূষিত ছুঁচের মাধ্যমে (Through blood transfusion and contaminated needles) : হাম রোগের ভাইরাস, HIV প্রভৃতি রক্ত-সঞ্চারণ ও দূষিত ছুঁচ ব্যবহারের মাধ্যমে একদেহ থেকে অন্যদেহে বাহিত হয়।


