চিকেন ফার্মের ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছেন? জেনে নিন ব্যবসা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য।
অনেকেই ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবেন, কিন্তু কোন ব্যবসা শুরু করলে অল্প মূলধন দিয়ে অনেক বেশি লাভ করতে পারবেন এটা ভেবে উঠতে পারেন না। আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাকে চিকেন ফার্মের ব্যবসা শুরু করা নিয়ে আপনাদেরকে জানাবো। চিকেন ফার্মের ব্যবসা শুরু করতে খুব বেশি মূলধন লাগেনা। কিন্তু যেহেতু চিকেনের অনেক চাহিদা রয়েছে, তাই এই ব্যবসা থেকে অনেক টাকা আয় করার সুযোগ রয়েছে। কীভাবে শুরু করবেন চিকেন ফার্মের ব্যবসা? কত টাকা মূলধন প্রয়োজন? ব্যবসার সম্পসারন ঘটাবেন কিভাবে? এই সকল তথ্য রইল প্রতিবেদনে।
বর্তমানে চাকরির জন্য অপেক্ষা করার থেকে নিজের স্বাধীনতায় ব্যবসা শুরু করা ঢের ভালো। কোন একটা ব্যবসা শুরু করতে হলে সবার প্রথমে দরকার সেই ব্যবসার সম্পর্কে একটা জ্ঞান। ব্যবসা শুরু করার জন্য সেই ব্যবসার সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হয়। ভারতে মুরগির ফার্ম এর সংখ্যা অনেক। বাচ্চা থেকে বয়স্ক প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে চিকেন, মুরগির ডিম একটি পছন্দের খাবার। এই জন্য চিকেনের চাহিদা রয়েছে অনেক। আপনি যদি মুরগির ফার্মের ব্যবসা শুরু করতে ইচ্ছুক থাকেন, কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করবেন দেখে নিন।
মুরগির ফার্মের ব্যবসা করার আগে সর্বপ্রথম আপনাকে মুরগি কিভাবে পালন করতে হবে সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এর জন্য দরকার আপনাকে কোন বিশেষ মুরগির ফার্ম থেকে মুরগি পালনের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়া। মুরগির ফার্ম করার আগে আপনাকে যে তিনটি জিনিসের ওপর নজর দিতে হবে প্রথমত হল জায়গা, মুরগির ফার্ম করার জন্য একটি বৃহৎ জায়গার প্রয়োজন রয়েছে। দ্বিতীয় হলো আর্থিক সঙ্গতি। কারণ অর্থ ছাড়া কোন ব্যবসা শুরু করাই সম্ভবপর নয়। এবং সব থেকে বেশি যেটি দরকার সেটি হল মুরগি পালনের বিশেষ অভিজ্ঞতা। প্রথমেই একসঙ্গে অনেকগুলো মুরগি প্রতিপালনের ভার নেবেন না। প্রথমবার ৫০ থেকে ১০০ টি মুরগি নিয়ে ছোট করে মুরগির ফার্ম তৈরি করুন। আস্তে আস্তে ব্যবসার হাত পাকা হলে, তখন মুরগির ফার্ম আরো বৃহৎ পরিসরে করার কথা ভাববেন।
মুরগি প্রতিপালনের জন্য ঘর :- মুরগি প্রতিপালনের জন্য সবার আগে দরকার মুরগিদের বাসস্থান তৈরি করা। একজন মানুষের বাসস্থান তৈরি করার জন্য যেমন সব দিক থেকে প্রতিকূল হওয়া দরকার তেমনি মুরগি প্রতিপালনের জন্য বা মুরগির থাকার জন্য ঘরটিও অনুকূল হওয়া প্রয়োজন। ঘরটিতে যাতে হাওয়া বাতাস প্রবেশ করতে পারে এবং খোলামেলা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মুরগির থাকার ঘর উচ্চতায় ৪ ফুট, প্রস্থে সাড়ে ৪ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৬ ফুট করলে সবচেয়ে ভালো হয়। এর ভেতরে ডিম পাড়ার খাঁচি, খাবার পাত্র ও জলের পাত্র দিয়ে রাখতে হবে। সবসময় খেয়াল রাখবেন খাবার পাত্রে ও জলের পাত্র যাতে শূন্য না থাকে। এইরকম মাপের একটি ঘর করলে ৫০০ থেকে ১০০০ টি মুরগি সেই ঘরে আপনি পালন করতে পারবেন।
মুরগির ঘর তৈরি করার সময় আরো যে বিশেষ সতর্কতা গুলি অবলম্বন করা দরকার সেগুলি হল :-
১) ঘর সব সময় শুকনো ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
(২) খোলামেলা স্থানে ঘর তৈরি করতে হবে যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস খেলা করতে পারে। সব থেকে ভালো হয় পূর্ব – পশ্চিম দিক করে ঘরটি বানানো হলে।
(৩) ঘরের মেঝে ৩ ইঞ্চি পুরু রাখতে হবে। ঘরের মেঝেতে তুস, কাঠের গুঁড়া বা বালি ভালোভাবে মিশিয়ে সমানভাবে বিছিয়ে দিতে হবে।
(৪) মেঝের কাঠের গুঁড়া বা তুস ৭ দিন পরপর ওলট–পালট করে দিতে হবে। স্যাঁতসঁতে হলে বা জমাট বেধে এই মিশ্রণ পরিবর্তন করে দিতে হবে।
মুরগির জোগান কোথা থেকে পাবে:- মুরগির জোগান নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। আপনার বাড়ির আশেপাশে কোন মুরগির ফার্ম থেকে মুরগি কিনে এনে আপনি পালন করতে পারেন, এছাড়া বাজারে যে মুরগি বিক্রি হয় সেখান থেকেও মুরগি ইচ্ছে করলে আপনি কিনতে পারেন। চেষ্টা করবেন ভালো জাতের মুরগি কেনার।
মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার :- ভালো ডিম পেতে হলে মুরগির জন্য সুষম খাদ্য দিতে হবে। প্রতিদিন মুরগিকে ১১৫ গ্রাম সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি এবং 25 গ্রাম শাকসবজি খেতে দিতে হবে।
প্রত্যহ প্রতিটি মুরগিকে ১১৫ গ্রাম সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও ২৫ গ্রাম সবুজ শাক–সবজি বা কচি ঘাস কুচি কুচি করে কেটে খেতে দেওয়া যেতে পারে।
সুষম খাদ্যের পরিমাণ :- গম/ভুট্টা ভাঙা বা চালের খুদ ৪০০ গ্রাম। গমের ভুসি ৫০ গ্রাম। চালের কুঁড়া (তুষ ছাড়া) ২৫০ গ্রাম। তিলের খৈল ১২০ গ্রাম। শুঁটকি মাছের গুঁড়া ১০০ গ্রাম। ঝিনুকের গুঁড়া ৭৫ গ্রাম। সুষম খাদ্য মোট ১,০০০ গ্রাম বা ১ কেজি।
ব্যবসা থেকে আয় কত :- মুরগির ফার্ম থেকে কত আয় হবে, সেটা নির্ভর করে ফার্মের আকার, মুরগির জাত ও বাজারের চাহিদার ওপর। যেমন, ১০০০টি ব্রয়লার মুরগি ৬-৮ সপ্তাহে প্রায় ১,৫০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা আয় করার সুযোগ পাবেন। দেশি মুরগির ফার্মের ক্ষেত্রে ডিম, মঙ্গা বিক্রি এবং সার বিক্রি করলে মোট আয় ৪,০০,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।
অল্প মূলধন বিনিয়োগ করে বেশি লাভ করার জন্য মুরগির ফার্ম একটি লাভজনক ব্যবসা। আপনি যদি অল্প সময়েই লাভবান হতে ইচ্ছুক হন, তাহলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।


