ব্যবসায়িক টিপস

কীভাবে প্যাকেজযুক্ত পানীয় জলের ব্যবসা শুরু করবেন? জেনে নিন বিস্তারিত।

জলের অপর নাম জীবন। খাদ্য ছাড়াও যদিও মানুষ দু একদিন বেঁচে থাকতে পারে তবে জল ছাড়া বেঁচে থাকা নৈব নৈব চ। বিভিন্ন জায়গায় যেমন নদী, নালা, খাল-বিল, পুকুরে জল পাওয়া যায়। কিন্তু পানীয় হিসাবে খোলা জল খাওয়া কখনোই নিরাপদ নয়। এতে জীবাণু, ধূলিকণা, দূষণ পদার্থ মিশে থাকে যা আমাদের শরীরের নানা রকম ক্ষতি করে। জল দূষণ আমাদের পরিবেশে ভয়াবহ জিনিস। এজন্যই প্রক্রিয়াজাত পরিশোধিত জল পানি হিসেবে পান করা উচিত। পরিষ্কার উৎস থেকে ফিল্টার করা জল পান করলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে এবং রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। এইজন্যই সমাজে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য প্যাকেটজাত ও পানীয় জলের চাহিদা বাড়ানো হয়েছে। আপনিও এই প্যাকেটজাত পানীয় জল ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বর্তমানে এই ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কিভাবে আপনি এই ব্যবসা শুরু করবেন সেই সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হচ্ছে আজকের এই প্রতিবেদনে। 

জলের বিপণন স্থান :- স্কুল, কলেজ, অফিসে বিশুদ্ধ প্যাকেটজাত পানীয় জলের চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি স্কুল কলেজ ও অফিসগুলোতে অর্ডার নিতে পারেন তাহলে অনেকটাই লাভবান হবেন এই ব্যবসা থেকে। 

এছাড়া ক্যাফে বা রেস্টুরেন্টগুলোতে যদি অর্ডার নিতে পারেন তাহলে অনেক লাভবান হবেন কারণ এখানে মানুষের উপস্থিতি অনেকটাই বেশি থাকে। 

মেলা বা কোন ইভেন্টে যদি অর্ডার ধরতে পারেন সেখানেও অনেক লোকের উপস্থিতি থাকার জন্য প্যাকেটজাত জলের চাহিদা থাকবে।

কোন বড় বাজার বা মুদির দোকানের সাথে কন্টাক্ট করলে আপনি সেখানেও অর্ডার সাপ্লাই করতে পারবেন। 

এছাড়া আপনি নিজের ঘরে প্যাকেটজাত জলের স্টোর করলে আপনার পাড়ার চেনাশোনা মানুষজন আপনার বাড়ি থেকে জল নিয়ে যাবে কিংবা আপনি তাদের বাড়িতেও হোম ডেলিভারি দিতে পারেন।

ব্যবসায় কতজন কর্মচারীর প্রয়োজন হবে :- আপনি যদি মাঝারি থেকে বড়ো বোতল করে পানি সাপ্লাই করতে চান, তাহলে অনেক কর্মচারীর প্রয়োজন হবে কারণ এখানে একত্রে অনেকগুলো কাজ করার জন্য লোকের প্রয়োজন হবে। কোন ব্যক্তি মেশিন পরিচালনার কাজ করবে, কোন ব্যক্তি কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ এর সহায়তা করবে এছাড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিশোধন, ফিলিং, ক্যাপিং, লেভেলিং এগুলো করার জন্য প্রশিক্ষিত লোক দরকার পড়বে। মোটামুটি পাঁচ জন শ্রমিক, পাঁচজন টেকনিক্যাল স্টাফ, একজন ম্যানেজার, দুইজন রক্ষণাবেক্ষণ পুরুষ এবং দুইজন নিরাপত্তা রক্ষী থাকলে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। সামগ্রিকভাবে 15 জন পুরুষ মিলে এই ব্যবসাটি শুরু করলে খুব ভালোভাবে এই ব্যবসার সঞ্চালনা করতে পারবেন। 

আরোও পড়ুন:- মাছ চাষের ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছেন? জেনে নিন এই জাত সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য।

কিভাবে একটি প্যাকেজযুক্ত পানীয় কারখানা গড়ে তুলবেন :- কোন একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমে পরিকল্পনা করে নেওয়া দরকার। প্যাকেজ যুক্ত পানীয় জল কারখানা দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে একটি প্লান্ট স্থাপন করতে হবে। এরপর এই ব্যবসা শুরু করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট নিতে হবে।

ভোটাধিকার বেছে নিতে হবে, এটি মানে হল আপনি যে প্যাকেজ জলের ব্যবসা শুরু করছেন সেই কোম্পানির প্যাকেজ জল আপনার এলাকায় অন্য কোন কেউ পরিষেবা দিচ্ছে কিনা সেটি আগে জানতে হবে। যদি একই অঞ্চলে দুজন একই কোম্পানির পরিষেবা প্রদানকারী থেকে থাকে তাহলে আপনার আবেদন বাতিল করে দেবে সেই কোম্পানি। 

আপনার মূলধন ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পরে এবং ভোটাধিকার পাওয়ার পরে আপনাকে ল্যান্ড তৈরি করার জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন করতে হবে।। আপনাকে এমন স্থান বেছে নিতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত জলের সরবরাহ রয়েছে এবং বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত রয়েছে। 

এরপর প্ল্যান্টের জন্য যথোপযুক্ত মেশিন আপনাকে কিনতে হবে এবং সরকার থেকে একটি অনুমতি পত্র আপনাকে দাখিল করতে হবে। যেহেতু এই জল মানুষের পানীয় জল হিসেবে ব্যবহৃত হবে তাই, স্বাস্থ্যের দিকটি খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্যই সরকার থেকে আপনাকে একটি লাইসেন্স নিতে হবে। 

এরপরে কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে এবং জল প্রক্রিয়াকরন এবং বোতলজাত করে সাপ্লাই করতে হবে। 

প্ল্যান্ট বসানোর জন্য কোন কোন অনুমতি আপনাকে নিতে হবে :- 

এসএসআই নিবন্ধন – ব্যবসা শুরু করার জন্য শিল্প বিভাগ থেকে উপযুক্ত লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। এই আবেদনটি আপনাকে আর্থিক তহবিল, ও কারখানার সরঞ্জাম কিনতে সাহায্য করবে। 

বিআইএস রেজিস্ট্রেশন – আপনি যে কোন ব্যবসা শুরু করার জন্য ভারতীয় মানদণ্ড ব্যুরো থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। ISI হল গুণ এবং বিশুদ্ধতার চিহ্ন। যেহেতু পানীয় জল একটি স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাই মিনারেল ওয়াটার ব্যবসা শুরু করার জন্য আই এস আই রেজিস্ট্রেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিবেদন – রাজ্য সরকার বেশ কয়েকটি উত্পাদন শিল্পকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ শংসাপত্র প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে প্যাকেজিং জলে ব্যবসা। বিশেষজ্ঞরা আপনার প্যাকেজিং জলের পরীক্ষা করে নিশ্চিত করবেন যে এটির মধ্যে কোন দূষিত পদার্থ রয়েছে কিনা। 

জল প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় কোন কীটপতঙ্গ রয়েছে কিনা বা কীটপতঙ্গ থেকে জলের মধ্যে কোন দূষিত পদার্থ আসছে কিনা সেটা দেখার জন্য কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ থেকেও অনুমতি নিতে হবে। 

কর্মীর মেডিকেল সার্টিফিকেট – কোম্পানির মালিককে প্রত্যেক কর্মীর স্বাস্থ্য প্রতিবেদন জমা দিতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগে।  অর্থাৎ মালিককে নিশ্চিত করতে হবে, শ্রমিকরা  কোন রকমের সংক্রমণ রোগ আক্রান্ত নেই। অন্যথায়, স্বাস্থ্য বিভাগ লাইসেন্স দেবে না।

ট্রেডমার্ক এবং ব্র্যান্ড নিবন্ধন – ব্র্যান্ডের নাম এবং লোগো নিবন্ধন পড়া জরুরী। এটি কোম্পানির পরিচয় রক্ষা করবে।

জমির মালিকানা নিবন্ধন – কারখানা স্থাপনের জন্য ভূমির পরিদর্শন হবে। আপনার যদি নিজের জমি না থাকে তাহলে যে জায়গায় এটা শুরু করবেন সেই মালিকের থেকে জমির অনুমতি পত্র পেতে হবে। 

লেআউট গ্রান্ট পারমিট – আপনাকে পৌরসভা বা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে অনুমোদিত লেআউট প্ল্যান পেতে হবে।

পাওয়ার সার্টিফিকেট – আপনার মিনারেল ওয়াটার প্লান্ট তৈরি করতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে এর জন্য আপনাকে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগে বিদ্যুতের পারমিট পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনার আবেদন গ্রান্টেড হলে বিদ্যুৎ কোম্পানি আপনার প্লান্ট একটি মিটার স্থাপন করবেন।

পাওয়ার এজেন্সি থেকে সার্টিফিকেশন – আপনি পাওয়ার এন্টারপ্রাইজ এবং ডিপার্টমেন্ট থেকে নিরাপত্তা সার্টিফিকেট  যতক্ষণ না ভাবেন ততক্ষণ এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন না। পাওয়ার এজেন্সি থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে আপনার প্লান্ট পর্যবেক্ষণ করে যাবেন। প্লান্টের যন্ত্রপাতি দেখবেন, মিটার দেখবেন। এই সমস্ত পর্যবেক্ষণ করার পর তারা যখন অনুমতি দেবেন তখনই আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

কিভাবে ব্যবসার প্রচার করবেন :- 

আপনার ব্যবসার সম্প্রসারণ। ঘটনার জন্য বর্তমানে অনলাইন বিজ্ঞাপন একটি প্রধান মাধ্যম। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম পেজ তৈরি করে আপনি আপনার ব্যবসা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করতে পারেন। হোডিং, ব্যানার তৈরি করে আপনি এলাকায় টানাতে পারেন। এছাড়া বিনামূল্যে হ্যাংআউট তৈরি করে জনগণকে দিতে পারেন আপনার ব্যবসা সম্পর্কে অবগত করার জন্য।

আপনি যদি দেখেন যে আপনার এলাকায় এই ব্যবসা এখনো পর্যন্ত কেউ শুরু করেননি তাহলে আপনি এই ব্যবসা শুরু করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। কিভাবে শুরু করবেন তার জন্য উপরে বর্ণিত পদ্ধতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেভাবে স্টেপ বাই স্টেপ ফলো করে আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। পানীয় জল বিশেষ করে বিশুদ্ধ প্যাকেজিং পানীয় জলের চাহিদা খুবই রয়েছে তাই এই ব্যবসা লাভজনক ব্যবসা।

Leave a Reply

Back to top button