ব্যবসায়িক টিপস

মাছ চাষের ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছেন? জেনে নিন এই জাত সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য।

চাকরি থেকে অনেকেই ব্যবসা করার কথা ভেবে থাকেন, তা সবচেয়ে বড় কারণ হলো ব্যবসায় রয়েছে স্বাধীনতা। নিজের দক্ষতায় এবং বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রতায় আপনি ব্যবসা করে চাকরির থেকেও অনেক বেশি টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এমনই একটি ব্যবসা হল মাছ চাষের ব্যবসা। বাঙালি মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ চাষের ব্যবসা করে অনেকেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। যে সমস্ত যুবকরা পিসিকালচার বা প্রাণিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তাদের কাছেও এই মৎস্য চাষের ব্যবসা একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদেরকে জানাতে চলেছি কিভাবে মাছ চাষের ব্যবসা শুরু করবেন, কি কি কাঁচামাল প্রয়োজন, কি হবে ব্যবসার সম্প্রসারণ করবেন এবং যাবতীয় আরও তথ্য থাকছে। 

মৎস্য চাষের সুবিধা গুলো কি কি?

মাছ চাষকে পিসিকালচার বলা হয়ে থাকে। মাছ চাষের চাহিদা রয়েছে অনেক, যেহেতু বাঙালিরা মাছ খেতে খুবই ভালোবাসেন এবং একটি সার্ভেতে উঠে এসেছে ভারতীয়রা দুবেলা ৬০ শতাংশ মাছ খেয়ে থাকেন। যেহেতু মাঝের খুব চাহিদা রয়েছে এবং এই আয় থেকে লাভ হওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে তাই এই ব্যবসা শুরু করা খুবই বুদ্ধিমানের কাজ। 

ভারতের ক্রান্তীয় জলবায়ু মাছ চাষের জন্য এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য আদর্শ। ভারত যেহেতু নদীমাতৃক দেশ তার জন্যই ভারতে নদী-নালা, খাল, বিল, পুকুর, জলাশয় পরিপূর্ণ রয়েছে। এজন্যই ভারতে মাছ চাষের জন্য আদর্শ স্থান বলা যায়। এছাড়া মাছ চাষ কৃষি কাজের মতন শ্রমসাধ্য ব্যাপার নয়। প্রক্রিয়াকরণ প্রত্যেকদিন না করলেও চলে এর জন্য বাড়ির গৃহবধূ ও বাড়ির ছোট বাচ্চারাও এই কাজে সহযোগিতা করতে পারে।

মৎস্য চাষের জন্য কি কি জিনিস দেখে নেওয়া দরকার?

প্রথমেই একটি পুকুরে যদি মাছ চাষ করা হয় তাহলে তার সাইট নির্বাচন করা সবার আগে দরকার। তার কারণ এমন সাইটে মাছ চাষ করা দরকার, যেখানে সারা বছর জল সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে এবং সেখানকার মাটির জল ধারণ ক্ষমতা ভালো থাকতে হবে। 

সাইট নির্বাচন করার কারণ গুলি হল 

জৈব, পরিবেশগত, সামাজিক ও জৈবিক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। 

মাছের খামার প্রতিষ্ঠা করার সময় বীজের উৎস, জাত, সংস্কৃতি প্রকার, প্রজাতি ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে।

মাছ চাষের জন্য মাছ চাষ পুকুর নির্মাণ করার সময় পুকুরের জল, মাটি এগুলো পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার। প্রাথমিকভাবে দেখতে হবে যাতে মাটি জল ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে। মাটির জল ধরার ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য ভেজা হাতে একমুঠো মাটি নিয়ে এটি চেপে ধরে রাখুন। মুঠো খোলার পর মাটির আকারটি যদি একই রকম ভাবে থাকে, তাহলে বুঝবেন এই মাটি পুকুর নির্মাণ এর জন্য উপযুক্ত। বেলে মাটি, পাথরে মাটি, কাকরে মাটি জল ধরার ক্ষমতা কম থাকায় এই মাটিতে পুকুর নির্মাণ করা ঠিক হবে না মাছ চাষের জন্য। দোআঁশ মাটি এবং পলিমাটি মাছ চাষের পুকুর নির্মাণ করার জন্য আদর্শ। 

পুকুরের জলে PH সঠিক মাত্রায় থাকতে হবে। বেশি অ্যাসিডিক জল মাছ চাষের জন্য অনুকূল নয়। বন্যা প্রবণ এলাকায় মাছ চাষের জন্য পুকুর কাটা উচিত নয়। পুকুরটি এমন ভাবে নির্মাণ করতে হবে যেটি প্রাকৃতিক জলাশয় বা নদীর মতন দেখতে হয়। অতিরিক্ত লবণাক্ত জল মাছ চাষের জন্য অনুকূল হবে না কারণ অনেক মাছ লবণাক্ত জলে বেঁচে থাকতে পারে না। পুকুর নির্মাণের জন্য ল্যান্ড টোগোগ্রাফি পরীক্ষা প্রয়োজনীয়। শিল্প অঞ্চল, বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল, কম বৃষ্টিপাতের অঞ্চল, বিদ্যুতের খুঁটি এবং ঘন শিকড় গাছপালার মতো অঞ্চলগুলিতে মাছ চাষের জন্য আদর্শ পুকুর নির্মাণ করা যাবে না। 

ভারতে মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্মাণ কিভাবে করবেন?

মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্মাণ করতে হলে প্রথমে সাইট ক্লিয়ারিং, তীর বা ডাইক নির্মাণ, পুকুর খনন, লতা ও আউটলেট নির্মাণ, ডাইকের আচ্ছাদন করা এবং সর্বশেষ কাজ হলো বেড়া দেওয়া। 

১) প্রথমেই সাইট ক্লিয়ারিং করার জন্য ঝোপঝাড় গাছের ডাল পালা এবং অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। পুকুর যেখানে নির্মাণ করা হবে, তার আশেপাশের 10 মিটারের মধ্যে যে গাছপালা রয়েছে সেগুলি কেটে ফেলতে হবে। ভূমিপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 30 সেন্টিমিটার পর্যন্ত মাটি পরিস্কার করা দরকার কারণ অনেক সময় গাছের শিকড় বা অন্যান্য জৈব ধ্বংসাবশেষ থেকে যায় যেটি পুকুরের নির্মাণ করার সময় সমস্যা সৃষ্টি করবে।

২) ডাইক খনন এবং নির্মাণ :- 

এটা আদর্শ পুকুর নির্মাণ করতে 15-30% পলি, 30-35% কাদামাটি এবং 45-55% বালি থাকতে হবে। ডাইকটি খননের পরে যাতে রিজটি ওপেলের সাথে আনুপাতিক আছে কিনা দেখে নেওয়া দরকার। 1: 2 অনুপাতের বালি এবং কাদামাটির মিশ্রণটির রঞ্জক উন্নত করতে 15 সেমি পুরু স্তর তৈরি করতে হবে।  এটি পুকুরের মাঝখানে করা হয়। 

৩) খালি এবং আউটলেট নির্মাণ :- 

পুকুরগুলিতে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলের সরবরাহ থাকে তার জন্য ফিডার খাল পুকুরের পাশাপাশি নির্মিত করা হয়। যাতে এই আউটলেট গুলি থেকে জল প্রবাহিত হয় পুকুরের মধ্যে। ফাল্গুলি পুকুরের শিষে নির্মাণ করা হয় এবং পুকুরের নিচের দিকে থাকে আউটলেট গুলি। খালি পাইপগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে এটি পূর্ণ হতে দুদিনের বেশি সময় লাগে না। এই আউটলেট গুলি বিশুদ্ধ তাজা জলের প্রতিস্থাপনের সময় বাঁশি বা আগের জমে থাকা জড় নিষ্কাশনের সাহায্য করে। 

কোন প্রজাতির মাছ কোন ধরনের পুকুরে চাষ করবেন?

মাছের সঠিকভাবে বৃদ্ধির পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের পুকুর ব্যবহার করা হয়। 

১) নার্সারি পুকুর : তিন থেকে চার সেমি বড়ো  নবহওয়া পর্যন্ত এই পুকুরে তিন দিনের পুরানো স্প্যানগুলি লালন করা হয়। এখানে ৩০ দিনের মতন সময় নেওয়া হয় লালন করার জন্য। 

২) ট্যাংক : এই ধরনের মাছ ১২ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার আকারের না হওয়া পর্যন্ত এইরকম ট্যাংকে লালন পালন করা হয়। এই মাছগুলোই সাধারণত ভজা নামে পরিচিত। 

৩) মজুদ পুকুর : বাজারের যে বড় মাছগুলো পাওয়া যায় অত পর্যন্ত বড় না হওয়া পর্যন্ত মজুদ পুকুরে লালন পালন করা হয়। এরকম পুকুরের আয়তন দুই থেকে তিন হেক্টর হয়ে থাকে। 

৪) জৈব পুকুর : জলাশয়ে ফিশপোন্ডের জল জৈবিকভাবে বিশুদ্ধ করা হয়। এটি কখনো স্টকিং করা হয়। 

মাঝের প্রজাতি বিচার করা :- পুকুর নির্মাণ করার পরবর্তী পদক্ষেপ হলো মাছের প্রজাতি বাছাই করা। কোন ধরনের মাছ আপনার পুকুরের জন্য উপযুক্ত হবে সেই মাছগুলোকে বা মাছের প্রজাতি গুলোকে আইডেন্টিফাই করা। মাছের সঠিক ধরণ এবং জাত নির্বাচন করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার পুকুরের মাছের জন্য উপযুক্ত কিনা। উদাহরণস্বরূপ, রোহু, ক্যাটফিশ, ক্যাটলা, ঘাস কার্প ইত্যাদি কার্প ফিশগুলি ভারতীয় পুকুরগুলির জন্য আদর্শ। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রজাতি হ’ল পঙ্গপাল, বার্বস, মিঠা পানির হাঙ্গর, ড্যান্ডেলিয়নস, গোল্ডফিশ ইত্যাদি।

আপনি যদি এগ্রিকালচার বা ফিস কালচার এসব বিষয় নিয়ে আগ্রহী থাকেন তাহলে মৎস্য চাষ ব্যবসা শুরু করে এই ব্যবসা থেকে অনেক লাভ উঠাতে পারবেন। 

 মাছ এমন একটি খাদ্যদ্রব্য যার চাহিদা কোনদিনই কমার নয়। তাই বাজারে চাহিদার কথা ভেবে এবং মাছের দামের যা উর্ধ্বগতি রয়েছে সেই দিক থেকে চিন্তা করলে মৎস্য চাষ এটা আদর্শ ব্যবসা।

Leave a Reply

Back to top button